হিজামা থেরাপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন কী?

হিজামা কি?
হিজামা হল এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত শোষণ বা চোষণের মাধ্যমে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য চিকিৎসা করা হয়। এই পদ্ধতিকে বাংলায় শিঙ্গা এবং ইংরেজিতে Cupping therapy বলা হয়। কাপিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে হিজামা এবং ফায়ার কাপিং বহুল প্রচলিত৷

এখন থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে এই হিজামা পদ্ধতি চালু হয়৷ বর্তমানে সময়ে আরব, কোরিয়া, চীন ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে হিজামা বেশ জনপ্রিয়৷ তবে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের দেশেও এখন অনেকেই হিজামা সম্পর্কে জানছে এবং এ চিকিৎসা ব্যবস্থার সুফল পেতে শুরু করেছে। জাপান, আমেরিকা, চীনেও আধুনিক পদ্ধতিতে হিজামা/শিঙ্গা/­Wet Cupping চিকিৎসা করানো হচ্ছে।

অলিম্পিক খেলায় অংশগ্রহণকারী অনেক তারকা খেলোয়াড়কে কাপিং থেরাপি নিতে দেখা গিয়েছে। এবং তারা বিশ্ব মিডিয়ায় তা প্রচারও করেছেন। তারা ঘাড় ও পিঠের পেছনের ব্যাথার জন্য হিজামা করেছেন বলেই প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের শহীদ আফ্রীদি সহ আরো অনেক ক্রিকেটারকে হিজামা থেরাপি নিতে দেখা গেছে। তখন ধারণা করা হয় পাওয়ার হিটিং ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই তারা হিজামা করেছেন।

হিজামার পদ্ধতি
একটি মেশিন বা শিঙ্গা ব্যবহার করে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ থেকে রক্ত চুষে নেওয়া বা বের করে ফেলা হয় এই চিকিৎসায়। এটি রক্তের ভেতরের দূষিত রক্ত সদৃশ বর্জ্য দূর করে। যার ফলে মানুষ প্রশান্তি অনুভব করে।

হিজামা কেন করাবেন?
আপনি অসুস্থ হলে যেমন ডাক্তার দেখান। তারপর, প্রয়োজন হলে, অস্ত্রপোচার করেন। তেমনি আপনার রোগের জন্য হিজামা করাবেন। অতঃপর ইনশাআল্লাহ, আপনি রোগ থেকে মুক্তি পাবেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতও পালন করা হলো।

হিজামা করার উপকারিতা

লিভারকে পরিস্কার করে (Liver Detoxify)
ঘুমের উন্নতি করে
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করে
কিডনি পরিশ্রুত করে
শরীরের ব্যথা/ জ্বালাপোড়া হ্রাস করে
বৃদ্ধ মানুষের বাত/ব্যথা নিরাময় করে
ত্বক পরিষ্কার করে।
শরীর থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ/Toxin বের করে নিয়ে আসে
শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যাথা,ঘাড় এবং ব্যাক পেইন দূর করতে সাহায্য করে।

হিজামা'র মাধ্যমে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয়ঃ

টনসিল
গ্যাস্ট্রিক পেইন
ব্যাক পেইন
হাঁটু ব্যাথা
ঘাড়ে ব্যাথা
কোমর ব্যাথা
পায়ে ব্যাথা
রক্তদূষণ
উচ্চরক্তচাপ
সাইনোসাইটিস
চুল পড়া (Hair fall)
হাঁপানি (Asthma)
ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia)
মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা
স্মৃতিভ্রষ্টতা (perkinson’s disease)
অস্থি সন্ধির ব্যাথা/ গেটে বাত
দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথা ব্যাথা
মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain)
দীর্ঘমেয়াদী পেট ব্যথা
হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথা
থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
হৃদরোগ (Cardiac Disease)
রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমন
দাঁত/মুখের/জিহ্বার সংক্রমন
মুটিয়ে যাওয়া (Obesity)
দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseses)
ত্বকের নিম্নস্থিত বর্জ্য নিষ্কাশন
ফোঁড়া, খোস-পাঁচড়া সহ আরো বহুবিধ চর্মরোগ।
ডায়াবেটিস (Diabetes)
ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্স/ হারনিয়েশান
মানসিক সমস্যা (Psycological disorder)...সহ আরও অনেক রোগ ইন শা আল্লাহ।



হিজামার ব্যবহার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়৷ এমনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিতও নয় হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করা হয়৷ ফলে আরোগ্য লাভ হয়৷ কিন্তু যেসব রোগে হিজামা করা হয়, তার কোনটাই রক্তের দূষণের ফলে হয় না৷ উপরন্তু দূষিত রক্ত বের করার যে কথা বলা হয় সেটিও সঠিক নয়৷ হিজামার দ্বারা দেহের ভালো রক্তই বের হয়ে আসে৷ দেখা যায় যে, কোনো ব্যক্তির দু’বার কাপিংয়ের ফলে যে পরিমাণ রক্ত দেহ থেকে বের হয় তা দিয়ে একজন অসুস্থ রোগীকে একবার রক্তদান করা সম্ভব৷

সুতরাং হিজামা থেরাপি নেওয়ার চেয়ে রক্তদান করার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।

Post a Comment